Header Ads Widget

WELCOME! ** 100% MOBILE FRIENDLY ONLINE EDUCATIONAL BLOG ** বাংলা সাহিত্য চর্চা ** WELCOME! ** 100% MOBILE FRIENDLY ONLINE EDUCATIONAL BLOG ** বাংলা সাহিত্য চর্চা **

ticker

6/recent/ticker-posts

বুধনী - বনফুলের শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প

 বুধনী - বনফুলের শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প

বুধনী - বনফুলের শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প


বুধনী

বনফুল

জীবনের সহিত যদি প্রদীপের উপমাটা দেওয়া যায় তাহা হইলে বিলটুর জীবন-প্রদীপের তৈল নিঃশেষপ্রায় হইয়াছেএ কথা কিছুতেই বলা চলিবে না। কারণ বিলটুর জীবন-প্রদীপে তৈল পুরাই আছে, সলিতাও ঠিক আছে, শিখাও উজ্জ্বলভাবে জ্বলিতেছে। কিন্তু সে শিখা নিবিবে। একটি সবল ফুৎকারে তাহাকে নিবাইয়া দেওয়া হইবে। কাল তাহার ফাঁসি।

সে দোষী কি নির্দোষ সে আলোচনা আমাদের অধিকারের বহির্ভূত। আইনের চক্ষে সে দোষী প্রমাণিত হইয়াছে এবং সমাজের মঙ্গলার্থে তাহাকে শাস্তি দেওয়া হইতেছে। হয়তো তাহাকে লইয়া মাথাই ঘামাইতাম না, যদি সেদিন জেলখানায় বেড়াইতে গিয়া তাহার আর্ত-করুণ চিৎকার না শুনিতাম!

বুধনী— বুধনী— বুধনী— বুধনী— বুধনী!” ভীত মিনতিভরা কণ্ঠে সে ক্রমাগত চেচাইয়া চলিয়াছে। বুধ্নী তাহার স্ত্রীর নাম।

দুই

হাজারিবাগের পার্বত্য প্রদেশে ইহাদের বাস। এই পার্বত্য পল্লীতেই একদা ধনুকধারী বিলটু শিকার সন্ধান করিতে করিতে বুধ্নীর দেখা পায় এক মহুয়া গাছের তলায়। নিকষ-কৃষ্ণাঙ্গী কিশোরী বুধনী। সভ্য কোনও যুবক আলো-ছায়া-খচিত মহুয়াতরুতলে কোনও কিশোরীকে দেখিলে যে ঔদাসীন্যভারে চলিয়া যাইত, বিলটু তাহা করে নাই। বন্য পশুর মতো সে তাহাকে তাড়া করিয়াছিল। ত্রস্ত হরিণীর মতো দ্রুতবেগে পলায়ন করিয়া বুধনী নিস্তার পায়। তখনকার মতো নিস্তার পাইল বটে, কিন্তু বিলটু তাহাকে স্বস্তি দিল না। অসভ্যটা তাহাকে দেখিলেই তাড়া করিত।

তিন

তাহার পর সেই বাঞ্ছিত দিবস আসিল।    

ইহাদের মধ্যে বিবাহের এক বিচিত্র প্রথা প্রচলিত ছিল। মাঝে মাঝে প্রভাতে বিস্তীর্ণ মাঠে ইহাদের সভা বসিত। সেই সভায় কুমার এবং কুমারীগণের সমাগম হইত। একটা পাত্রে খানিকটা সিঁদুর গোলা থাকিত। কোনও অবিবাহিতা যুবক কোনও কুমারীর পাণিপ্রার্থী হইলে তাহাকে সেই কুমারীর কপালে ওই সিঁদুর লাগাইয়া দিতে হইত। সিঁদুর লাগাইলেই কিন্তু যুবকের প্রাণ-সংশয়। সেই কুমারীর আত্মীয়স্বজন তৎক্ষণাৎ ধনুর্বাণ সড়কি বল্লম লইয়া যুবাকে তাড়া করিবে এবং যুবা যদি আত্মরক্ষা করিতে না পারে, মৃত্যু সুনিশ্চত। কিন্ত সে যদি সমস্ত দিন আত্মরক্ষা করিতে পারে তাহা হইলে সূর্যোস্তের পর গৃহে পৌছাইয়া দিবে।

এই শক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া বিলটু বুধনীকে জয় করিয়াছিল। এই তো সেদিনের কথাএখনও দুই বৎসর পুরা হয় নাই।

চার

অসভ্য বিলটু জংলী বুধনীকে পাওয়া কি ভাষায় কোন্‌ ভঙ্গীতে তাহার প্রণয় প্রকাশ করিয়াছিল তাহা আমি জানি না। কল্পনা করাও আমার পক্ষে শক্ত। আমি ড্রইংরুম-বিহারী সভ্যলোক, বর্বর বন্য-দম্পতির আদবকায়দা আমার জানা নাই। যাহারা গুহানিবাসী সুপ্ত শার্দুলকে ভল্লের আঘাতে হনন করে, মৃগের সঙ্গে ছুটিয়া পাল্লা দেয়, উত্তুঙ্গ পাহাড়ে অহরহ অবলীলাক্রমে উঠে নামে, পূর্ণিমা-নিশীথে

মহুয়ার মদে আনন্দের স্রোত বহাইয়া দেয়তাহাদের প্রণয়লীলা কল্পনা করার দুঃসাহস আমার নাই।

শুধু এইটুকু জানি, বিবাহের পর বিলটু বুধনীকে একদন্ড ছাড়ে নাই একদণ্ডও নয়। বনে জঙ্গলে পর্বতে গুহায় এই বর্বর দম্পতি অর্ধনগ্ন দেহে অবিচ্ছিন্নভাবে বিচরণ করিয়া বেড়াইত। বুধনীর খোঁপায় টকটকে লাল পলাশফুল, বিলটুর হাতে বাশের বাঁশি এই সম্বল।

পাঁচ

সহসা একটা বিপর্যয় ঘটিয়া গেল।

বুধ্নী এক সন্তান প্রসব করিল। অসহায় ক্ষুদ্র ক মানবশিশু। বুধনীর সে কি আনন্দ! বর্বর জননীরও মাতৃত্ব আছে, তাহারও অন্তরের সন্তান-লিপ্সা স্নেহময়ী জননীর কল্যাণী মূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করে। নারীত্বের ধাপে পা রাখিয়া বুধনী মাতৃত্বলোকে উত্তীর্ণ হইয়া গেল। বিলটু দেখিলএ কি! বুধনীকে দখল করিয়া বসিয়াছে এই শিশুটা! বুধ্নী তো তাহার আর একার নাই! অসহ্য।

ছয়

বিলটুর ফাঁসি দেখিতে গিয়াছিলাম। সে মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত চিৎকার করিয়া গেলবুধনী— বুধনী— বুধনী— বুধ্নী! ভগবানের নামটা পর্যস্ত করিল না।

নৃশংস শিশু-হত্যাকারীর প্রতি কাহারও সহানুভূতি হইল না।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ