ছিন্নপত্র – ১১৫রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শিলাইদা
১৩ই আগস্ট ১৮৯৪।
অহমিকার প্রভাবেই যে
নিজের কথা বলতে চাই তা নয়। যেটা যথার্থ চিন্তা করব, যথার্থ প্রাপ্ত হব, যথার্থরূপে
তাকে প্রকাশ করে তোলাই তার স্বাভাবিক পরিণাম। ভিতরকার একটা শক্তি ক্রমাগতই সেইদিকে
কাজ করচে। অথচ সে শক্তিটা যে আমারই তা মনে হয় না – সে একটা জগৎব্যাপ্ত শক্তি। নিজের
কাজের মাঝখানে নিজের আয়ত্তের বহির্ভূত আর একটি পদার্থ এসে তারই স্বভাবমত কাজ করে। সেই
শক্তির হাতে আত্মসমর্পণ করাই জীবনের আনন্দ। সে যে কেবল প্রকাশ করায় তা নয়, সে অনুভব
করায়, ভালবাসায়, সেইজন্যে অনুভূতি নিজের কাছে প্রত্যেকবার নূতন ও বিস্ময়জনক। নিজের
শিশু কন্যাকে যখন ভাললাগে তখন সে বিশ্বের মূল রহস্য মূল সৌন্দর্য্যের অন্তর্বর্ত্তী
হয়ে পড়ে – এবং স্নেহ উচ্ছ্বাস উপাসকের মত হয়ে আসে। আমার বিশ্বাস আমাদের প্রীতিমাত্রই
রহস্যময়ের পূজা; কেবল সেটা আমরা অচেতনভাবে করি। ভালবাসামাত্রই আমাদের ভিতর দিয়ে বিশ্বের
অন্তরতম একটি শক্তির সজাগ আবির্ভাব, - যে নিত্য আনন্দ নিখিল জগতের মুলে সেই আনন্দের
ক্ষণিক উপলব্ধি। নইলে ওর কোন অর্থই থাকে না। বিশ্বজগতে সর্ব্বব্যাপী আকর্ষণশক্তি যেমন
– ছোটবড় সর্বত্রই তার যেমন কাজ অন্তরজগতে সেই রকম একটা বিশ্বব্যাপী আনন্দের আকর্ষণ
আছে। সেই আকর্ষণেই আমরা বিশ্বের মধ্যে সৌন্দর্য ও হৃদয়ের মধ্যে প্রেম অনুভব করি, -
জগতের ভিতরকার সেই অনন্ত আনন্দের ক্রিয়া আমাদের মনের ভিতরেও কার্য করে। আমরা সেটাকে
যদি বিচ্ছিন্নভাবে দেখি তবে তার যথার্থ কোন অর্থ থাকে না। প্রকৃতির মধ্যে মানুষের মধ্যে
আমরা কেন আনন্দ পাই তার একটিমাত্র সদুত্তর হচ্ছে, আনন্দাদ্ধ্যেব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে।
0 মন্তব্যসমূহ