মুক্তধারা (৩য় পাঠ পর্ব)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
[উত্তরকূটের রাজা রণজিৎ ও তাঁহার
মন্ত্রী শিবিরের দিক হইতে আসিয়া প্রবেশ করিলেন]
রণজিৎ।। শিবতরাইয়ের প্রজাদের কিছুতেই তো বাধ্য করতে পারলে না। এতদিন
পরে মুক্তধারার জলকে আয়ত্ত করে বিভূতি ওদের বশ মানাবার উপায় করে দিলে। কিন্তু,
মন্ত্রী, তোমার তো তেমন উৎসাহ দেখছি নে। ঈর্ষা?
মন্ত্রী।। ক্ষমা করবেন, মহারাজ। খন্তা-কোদাল হাতে মাটি-পাথরের সঙ্গে
পালোয়ানি আমাদের কাজ নয়। রাষ্ট্রনীতি আমাদের অস্ত্র, মানুষের মন নিয়ে আমাদের
কারবার। যুবরাজকে শিবতরাইয়ের শাসনভার দেবার মন্ত্রণা আমিই দিয়েছিলুম, তাতে যে বাঁধ
বাঁধা হতে পারত সে কম নয়।
রণজিৎ।। তাতে ফল হল কী? দুবছর খাজনা বাকি। এমনতরো দুর্ভিক্ষ তো
সেখানে বারে বারেই ঘটে, তাই বলে রাজার প্রাপ্য তো বন্ধ হয় না।
মন্ত্রী। খাজনার চেয়ে দুর্মূল্য জিনিস আদায় হচ্ছিল, এমন সময় তাঁকে
ফিরে আসতে আদেশ করলেন। রাজকার্যে ছোটোদের অবজ্ঞা করতে নেই। মনে রাখবেন, যখন অসহ্য
হয় তখন দুঃখের জোরে ছোটোরা বড়োদের ছাড়িয়ে বড়ো হয়ে ওঠে।
রণজিৎ। তোমার মন্ত্রণার সুর ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। কতবার বলেছ উপরে চড়ে
বসে নীচে চাপ দেওয়া সহজ, আর বিদেশী প্রজাদের সেই চাপে রাখাই রাজনীতি। এ কথা বল নি?
মন্ত্রী। বলেছিলুম। তখন অবস্থা অন্যরকম ছিল, আমার মন্ত্রণা সময়য়োচিত
হয়েছিল। কিন্তু এখন—
রণজিৎ। যুবরাজকে শিবতরাইয়ে পাঠাবার ইচ্ছে আমার একেবারেই ছিল না।
মন্ত্রী। কেন মহারাজ?
রণজিৎ। যে প্রজারা দূরের লোক, তাদের কাছে গিয়ে ঘেঁষাঘেঁষি করলে তাদের
ভয় ভেঙে যায়। প্রীতি দিয়ে পাওয়া যায় আপন লোককে, পরকে পাওয়া যায় ভয় জাগিয়ে রেখে।
মন্ত্রী। মহারাজ, যুবরাজকে শিবতরাইয়ে পাঠাবার আসল কারণটা ভুলছেন।
কিছুদিন থেকে তাঁর মন অত্যন্ত উতলা দেখা গিয়েছিল। আমাদের সন্দেহ হল যে তিনি হয়তো
কোনো সূত্রে জানতে পেরেছেন যে তাঁর জন্ম রাজবাড়িতে নয়, তাঁকে মুক্তধারার ঝরনাতলা
থেকে কুড়িয়ে পাওয়া গেছে। তাই তাকে ভুলিয়ে রাখবার জন্যে—
রণজিৎ। তা তো জানি— ইদানিং ও যে প্রায় রাত্রে একলা ঝরনাতলায় গিয়ে
শুয়ে থাকত। খবর পেয়ে একদিন রাত্রে সেখানে গেলুম, ওকে জিজ্ঞাসা করলুম, ‘কী হয়েছে
অভিজিৎ, এখানে কেন?’ ও বললে, ‘এই জলের শব্দে আমি আমার মাতৃভাষা শুনতে পাই।’
মন্ত্রী। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলুম, ‘তোমার কী হয়েছে যুবরাজ?
রাজবাড়িতে আজকাল তোমাকে প্রায় দেখতে পাই নে কেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে এসেছি
পথ কাটবার জন্যে, এই খবর আমার কাছে এসে পৌঁচেছে।’
রণজিৎ। ঐ ছেলের যে রাজচক্রবর্তীর লক্ষণ আছে এ বিশ্বাস আমার ভেঙে
যাচ্ছে।
মন্ত্রী। যিনি এই দৈবলক্ষণের কথা বলেছিলেন তিনি যে মহারাজের গুরুর
গুরু অভিরামস্বামী।
রণজিৎ। ভুল করেছেন তিনি। ওকে নিয়ে কেবলই আমার ক্ষতি হচ্ছে।
শিবতরাইয়ের পশম যাতে বিদেশের হাটে বেরিয়ে না যায় এইজন্যে পিতামহদের আমল থেকে
নন্দিসংকটের পথ আটক করা আছে। সেই পথটাই অভিজিৎ কেটে দিলে। উত্তরকূটের অন্নবস্ত্র দু্র্মূল্য
হয়ে উঠবে যে।
মন্ত্রী। অল্প বয়স কিনা। যুবরাজ কেবল শিবতরাইয়ের দিক থেকেই—
রণজিৎ। কিন্তু এ যে নিজের লোকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। শিবতরাইয়ের ওই যে
ধনঞ্জয় বৈরাগীটা প্রজাদের খেপিয়ে বেড়ায়, এর মধ্যে নিশ্চয় সেও আছে। এবার কণ্ঠীসুদ্ধ
তার কন্ঠটা চেপে ধরতে হবে। তাকে বন্দী করা চাই।
মন্ত্রী। মহারাজের ইচ্ছার প্রতিবাদ করতে সাহস করি নে। কিন্তু জানেন
তো, এমন-সব দুর্যোগ আছে যাকে আটকে রাখার চেয়ে ছাড়া রাখাই নিরাপদ।
রণজিৎ। আচ্ছা, সেজন্যে চিন্তা করো না।
মন্ত্রী। আমি চিন্তা করি না,মহারাজকেই চিন্তা করতে বলি।
প্রতিহারীর প্রবেশ
প্রতিহারী। মোহনগড়ের খুড়া মহারাজ বিশ্বজিৎ অদূরে।
[ প্রস্থান ]
রণজিৎ। ঐ আর-একজন। অভিজিৎকে নষ্ট করার দলে উনি অগ্রগণ্য। আত্মীয়রূপী
পর হচ্ছে কুঁজো মানুষের কুঁজ, পিছনে লেগেই থাকে; কেটেও ফেলা যায় না,বহন করাও দুঃখ।
ও কিসের শব্দ?
মন্ত্রী। ভৈরবপন্থীর দল মন্দিরপ্রদক্ষিণে বেরিয়েছে।
ভৈরবপন্থীদের প্রবেশ ও গান
তিমিরহৃদ্বিদারণ
জ্বলদগ্নিনিদারুণ
মরুশ্মশানসঞ্চর
শংকর শংকর।
বজ্রঘোষবাণী
রুদ্র, শূলপাণি
মৃত্যুসিন্ধুসন্তর
শংকর শংকর।
[ প্রস্থান ]
রণজিতের খুড়া মোহনগড়ের রাজা বিশ্বজিৎ
প্রবেশ করিলেন
তাঁর শুভ্র কেশ, শুভ্র বস্ত্র, শুভ্র
উষ্ণীষ
রণজিৎ। প্রণাম। খুড়া মহারাজ, তুমি আজ উত্তরভৈরবের মন্দিরে পূজায় যোগ
দিতে আসবে এ সৌভাগ্য প্রত্যাশা করি নি।
বিশ্বজিৎ। উত্তরভৈরব আজকের পূজা গ্রহণ করবেন না এই কথা জানাতে এসেছি।
রণজিৎ। তোমার এই দুর্বাক্য আমাদের মহোৎসবকে আজ—
বিশ্বজিৎ। কী নিয়ে মহোৎসব? বিশ্বের সকল তৃষিতের জন্য দেবদেবের
কমণ্ডলু যে জলধারা ঢেলে দিচ্ছেন সেই মুক্ত জলকে তোমরা বন্ধ করলে কেন?
রণজিৎ। শত্রুদমনের জন্যে।
বিশ্বজিৎ। মহাদেবকে শত্রু করতে ভয় নেই?
রণজিৎ। যিনি উত্তরকূটের পুরদেবতা, আমাদের জয়ে তাঁরই জয়। সেইজন্যেই
আমাদের পক্ষ নিয়ে তিনি তাঁর নিজের দান ফিরিয়ে নিয়েছেন। তৃষ্ণার শূলে শিবতরাইকে
বিদ্ধ করে তাকে তিনি উত্তরকূটের সিংহাসনের তলায় ফেলে দিয়ে যাবেন।
বিশ্বজিৎ। তবে তোমাদের পূজা পূজাই নয়, বেতন।
রণজিৎ। খুড়া মহারাজ, তুমি পরের পক্ষপাতী, আত্মীয়ের বিরোধী। তোমার
শিক্ষাতেই অভিজিৎ নিজের রাজ্যকে নিজের বলে গ্রহণ করতে পারছে না।
বিশ্বজিৎ। আমার শিক্ষায়? একদিন আমি তোমাদেরই দলে ছিলেম না?
চণ্ডপত্তনে যখন তুমি বিদ্রোহ সৃষ্টি করেছিলে সেখানকার প্রজার সর্বনাশ করে সে
বিদ্রোহ আমি দমন করি নি? শেষে কখন ওই বালক অভিজিৎ আমার হৃদয়ের মধ্যে এল— আলোর মতো
এল। অন্ধকারে না দেখতে পেয়ে যাদের আঘাত করেছিলুম তাদের আপন বলে দেখতে পেলুম।
রাজচক্রবর্তীর লক্ষণ দেখে যাকে গ্রহণ করলে তাকে তোমার ওই উত্তরকূটের সিংহাসনটুকুর
মধ্যেই আটকে রাখতে চাও?
রণজিৎ। মুক্তধারার ঝরনাতলায় অভিজিৎকে কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল এ কথা
তুমিই ওর কাছে প্রকাশ করেছ বুঝি?
বিশ্বজিৎ। হাঁ, আমিই। সেদিন আমাদের
প্রাসাদে ওর দেওয়ালির নিমন্ত্রণ ছিল। গোধূলির সময় দেখি অলিন্দে ও একলা দাঁড়িয়ে
গৌরীশিখরের দিকে তাকিয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করলুম, ‘কী দেখছ ভাই?’ সে বললে, ‘যে-সব পথ
এখনো কাটা হয় নি ঐ দুর্গম পাহাড়ের উপর দিয়ে সেই ভাবীকালের পথ দেখতে পাচ্ছি— দূরকে
নিকট করবার পথ।’ শুনে তখনই মনে হল, মুক্তধারার উৎসের কাছে কোন্ ঘরছাড়া মা ওকে
জন্ম দিয়ে গেছে, ওকে ধরে রাখবে কে? আর থাকতে পারলুম না, ওকে বললুম, ‘ভাই, তোমার
জন্মক্ষণে গিরিরাজ তোমাকে পথে অভ্যর্থনা করেছেন, ঘরের শঙ্খ তোমাকে ঘরে ডাকে নি।’
রণজিৎ। এতক্ষণে বুঝলুম।
বিশ্বজিৎ। কী বুঝলে?
রণজিৎ। এই কথা শুনেই উত্তরকূটের রাজগৃহ থেকে অভিজিতের মমতা বিচ্ছিন্ন
হয়ে গেছে। সেইটেই স্পর্ধা করে দেখাবার জন্যে নন্দিসংকটের পথ সে খুলে দিয়েছে।
বিশ্বজিৎ। ক্ষতি কী হয়েছে? যে পথ খুলে যায় সে পথ সকলেরই—যেমন
উত্তরকূটের তেমনি শিবতরাইয়ের।
রণজিৎ। খুড়া মহারাজ, তুমি আত্মীয়, গুরুজন, তাই এতকাল ধৈর্য রেখেছি।
কিন্তু আর নয়, স্বজনবিদ্রোহী তুমি, এ রাজ্য ত্যাগ করে যাও।
বিশ্বজিৎ। আমি ত্যাগ করতে পারব না। তোমরা আমাকে ত্যাগ যদি কর তবে
সহ্য করব।
[প্রস্থান ]
অম্বার প্রবেশ
অম্বা। (রাজার প্রতি) ওগো তোমরা কে? সূর্য তো অস্ত যায়— আমার সুমন তো
এখনো ফিরল না।
রণজিৎ। তুমি কে?
অম্বা। আমি কেউ না। যে আমার সব ছিল তাকে এই পথ দিয়ে নিয়ে গেল। এ পথের
শেষ কি নেই? সুমন কি তবে এখনো চলেছে, কেবলই চলেছে, পশ্চিমে গৌরীশিখর পেরিয়ে যেখানে
সূর্য ডুবছে, আলো ডুবছে, সব ডুবছে?
রণজিৎ। মন্ত্রী, এ বুঝি—
মন্ত্রী। হাঁ মহারাজ, সেই বাঁধ বাঁধার কাজেই—
রণজিৎ। (অম্বাকে) তুমি খেদ কোরো না। আমি জানি পৃথিবীতে সকলের চেয়ে
চরম যে দান তোমার ছেলে আজ তাই পেয়েছে।
অম্বা। তাই যদি সত্যি হবে তা হলে সে-দান সন্ধেবেলায় সে আমার হাতে এনে
দিত, আমি যে তার মা।
রণজিৎ। দেবে এনে। সেই সন্ধে এখনও আসে নি।
অম্বা। তোমার কথা সত্যি হক বাবা। ভৈরবমন্দিরের পথে পথে আমি তার জন্যে
অপেক্ষা করব। সুমন!
[ প্রস্থান ]
একদল ছাত্র লইয়া অদূরে গাছের তলায়
উত্তরকূটের গুরুমশায় প্রবেশ করিল।
গুরু। খেলে, খেলে, বেত খেলে দেখছি। খুব গলা ছেড়ে বল্, জয়
রাজরাজেশ্বর।
ছাত্রগণ। জয় রাজরা—
গুরু। (হাতের কাছে দুই-একটা ছেলেকে থাবড়া মারিয়া)— জেশ্বর।
ছাত্রগণ। জেশ্বর।
গুরু। শ্রী শ্রী শ্রী শ্রী শ্রী—
ছাত্রগণ। শ্রী শ্রী
শ্রী—
গুরু। (ঠেলা মারিয়া)
পাঁচবার।
ছাত্রগণ। পাঁচবার।
গুরু। লক্ষ্মীছাড়া
বাঁদর! বল্ শ্রী শ্রী শ্রী শ্রী শ্রী—
ছাত্রগণ। শ্রী শ্রী শ্রী
শ্রী শ্রী—
গুরু।
উত্তরকূটাধিপতির জয়—
ছাত্রগণ। উত্তরকূটা—
গুরু। ধিপতির
ছাত্রগণ। ধিপতির
গুরু। জয়।
ছাত্রগণ। জয়।
রণজিৎ। তোমরা কোথায়
যাচ্ছ?
গুরু। আমাদের
যন্ত্ররাজ বিভূতিকে মহারাজ শিরোপা দেবেন তাই ছেলেদের নিয়ে যাচ্ছি আনন্দ করতে। যাতে
উত্তরকূটের গৌরবে এরা শিশুকাল হতেই গৌরব করতে শেখে তার কোনো উপলক্ষ্যই বাদ দিতে
চাই নে।
রণজিৎ। বিভূতি কী
করেছে এরা সবাই জানে তো?
ছেলেরা। (লাফাইয়া
হাততালি দিয়া) জানি, শিবতরাইয়ের খাবার জল বন্ধ করে দিয়েছেন।
রণজিৎ। কেন দিয়েছেন?
ছেলেরা। (উৎসাহে)
ওদের জব্দ করার জন্যে।
রণজিৎ। কেন জব্দ করা?
ছেলেরা। ওরা যে খারাপ
লোক।
রণজিৎ। কেন খারাপ?
ছেলেরা। ওরা খুব
খারাপ, ভয়ানক খারাপ, সবাই জানে।
রণজিৎ। কেন খারাপ তা
জান না?
গুরু। জানে বৈকি,
মহারাজ। কী রে, তোরা পড়িস নি— বইয়ে পড়িস নি— ওদের ধর্ম খুব খারাপ—
ছেলেরা। হাঁ, হাঁ,
ওদের ধর্ম খুব খারাপ।
গুরু। আর ওরা আমাদের
মতো— কী বল্-না— (নাক দেখাইয়া)
ছেলেরা। নাক উঁচু নয়।
গুরু। আচ্ছা, আমাদের
গণাচার্য কী প্রমাণ করে দিয়েছেন— নাক উঁচু থাকলে কী হয়?
ছেলেরা। খুব বড়ো জাত হয়।
গুরু। তারা কী করে?
বল্-না— পৃথিবীতে— বল্— তারাই সকলের উপর জয়ী হয়, না?
ছেলেরা। হাঁ, জয়ী হয়।
গুরু। উত্তরকূটের
মানুষ কোনোদিন যুদ্ধে হেরেছে জানিস?
ছেলেরা। কোনোদিনই না।
গুরু। আমাদের পিতামহ-মহারাজ প্রাগ্জিৎ দুশো তিরেনব্বই জন সৈন্য নিয়ে
একত্রিশ হাজার সাড়ে সাতশো দক্ষিণী বর্বরদের হটিয়ে দিয়েছিলেন না?
ছেলেরা। হাঁ, দিয়েছিলেন।
গুরু। নিশ্চয়ই জানবেন, মহারাজ, উত্তরকূটের বাইরে যে হতভাগারা
মাতৃগর্ভে জন্মায়, একদিন এই-সব ছেলেরাই তাদের বিভীষিকা হয়ে উঠবে। এ যদি না হয় তবে
আমি মিথ্যে গুরু। কতবড়ো দায়িত্ব যে আমাদের সে আমি একদণ্ডও ভুলি নে। আমরাই তো মানুষ
তৈরি করে দিই, আপনার অমাত্যরা তাঁদের নিয়ে ব্যবহার করেন। অথচ তাঁরাই বা কী পান আর
আমরাই বা কী পাই তুলনা করে দেখবেন।
মন্ত্রী। কিন্তু ওই ছাত্ররাই যে তোমাদের পুরস্কার।
গুরু। বড়ো সুন্দর বলেছেন, মন্ত্রীমশায়, ছাত্ররাই আমাদের পুরস্কার।
আহা, কিন্তু খাদ্যসামগ্রী বড়ো দুর্মূল্য—এই দেখেন-না কেন, গব্যঘৃত, যেটা ছিল—
মন্ত্রী। আচ্ছা বেশ, তোমার এই গব্যঘৃতের কথাটা চিন্তা করব। এখন যাও,
পূজার সময় নিকট হল।
[ জয়ধ্বনি করাইয়া ছাত্রদের লইয়া গুরুমহাশয় প্রস্থান করিল ]
রণজিৎ। তোমার এই গুরুর মাথার খুলির মধ্যে অন্য কোনো ঘৃত নেই,
গব্যঘৃতই আছে।
মন্ত্রী। পঞ্চগব্যের একটা-কিছু আছেই। কিন্তু, মহারাজ, এই-সব মানুষই
কাজে লাগে। ওকে যেমনটি বলে দেওয়া গেছে, দিনের পর দিন ও ঠিক তেমনটি করে চলেছে।
বুদ্ধি বেশি থাকলে কাজ কলের মতো চলে না।
রণজিৎ। মন্ত্রী, ওটা কী আকাশে?
মন্ত্রী। মহারাজ, ভুলে যাচ্ছেন, ওটাই তো বিভূতির সেই যন্ত্রের চূড়া।
রণজিৎ। এমন স্পষ্ট তো কোনোদিন দেখা যায় না।
মন্ত্রী। আজ সকালে ঝড় হয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে, তাই দেখতে পাওয়া
যাচ্ছে।
রণজিৎ। দেখেছ ওর পিছন থেকে সূর্য যেন ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছেন? আর, ওটাকে
দানবের উদ্যত মুষ্টির মতো দেখাচ্ছে। অতটা বেশি উঁচু করে তোলা ভালো হয় নি।
মন্ত্রী। আমাদের আকাশের বুকে যেন শেল বিঁধে রয়েছে মনে হচ্ছে।
রণজিৎ। এখন মন্দিরে যাবার সময় হল।
[উভয়ের প্রস্থান ]
(ক্রমশ ...)
0 মন্তব্যসমূহ