Header Ads Widget

WELCOME! ** 100% MOBILE FRIENDLY ONLINE EDUCATIONAL BLOG ** বাংলা সাহিত্য চর্চা ** WELCOME! ** 100% MOBILE FRIENDLY ONLINE EDUCATIONAL BLOG ** বাংলা সাহিত্য চর্চা **

ticker

6/recent/ticker-posts

আমার জীবন - রাসসুন্দরী দাসী

 আমার জীবন 
 রাসসুন্দরী দাসী

আমার জীবন রাসসুন্দরী দাসী
[বাংলা সাহিত‍্যে প্রথম আত্মজীবনী রচয়িতা হলেন – শ্রীমতী রাসসুন্দরী দাসী। গ্রন্থটির নাম হল – ‘আমার জীবন’। গ্রন্থটির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৩১৩ বঙ্গাব্দে। এই তৃতীয় সংস্করণে রাসসুন্দরী দেবীর লেখা আত্মজীবনীটির সঙ্গে আত্মজীবনীটির সম্পর্কে জ‍্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও দীনেশচন্দ্র সেনের রচনাও প্রকাশিত হয়। আমার জীবন’ গ্রন্থের দুটি ভাগ – প্রথম ভাগে জীবনকথা বর্ণিত, দ্বিতীয় ভাগে ভগবৎ বন্দনা বর্ণনা আছে। গ্রন্থের প্রথম ভাগে মঙ্গলাচরণ ও ১৬টি রচনা এবং দ্বিতীয় ভাগে আছে ১৫টি রচনা ও মনশিক্ষা। শ্রী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গ্রন্থের সম্পর্কে যথার্থই মন্তব্য করেছেন, “ইহার জীবনের ঘটনাবলী এমন বিস্ময়জনক এবং ইহার লেখায় এমন একটি অকৃত্রিম সরল মাধুর্য আছে যে, গ্রন্থখানি পড়িতে বসিয়া শেষ না করিয়া থাকা যায় না।” এই পর্বে থাকছে এই জীবনীগ্রন্থ সম্পর্কে জ‍্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর রচনা।]

 

প্রস্তাবনা

এই গ্রন্থখানি একজন রমণীর লেখা। শুধু তাহা নহে, ৮৮ বৎসরের একজন বর্ষীয়সী প্রাচীনা রমণীর লেখা। তাই বিশেষ কুতৃহলী হইয়া আমি এই গ্রন্থপাঠে প্রবৃত্ত হই। মনে করিয়াছিলাম যেখানে কোন ভাল কথা পাইব সেইখানে পেন্সিলের দাগ দিব। পড়িতে পড়িতে দেখি, পেন্সিলের দাগে গ্রন্থকলেবর ভরিয়া গেল। বস্তুতঃ ইহার জীবনের ঘটনাবলী এমন বিস্ময়জনক এবং ইহার লেখায় এমন একটি অকৃত্রিম সরল মাধুর্য আছে যে, গ্রন্থখানি পড়িতে বসিয়া শেষ না করিয়া থাকা যায় না।

ইহার আত্মজীবনী পড়িয়া মনে হয় ইনি একজন আদর্শ রমণী। যেমন গৃহকর্মে নিপুণা, তেমনি ধর্মপ্রাণ ও ভগবদ্ভক্ত। শৈশবে ইনি অতিশয় ভীরুস্বভাব ছিলেন। সেই সময়ে ইহার জননী ইহার ভয় নিবারণার্থ ইহাকে একটি অভয় মন্ত্র প্রদান করেন। সেই অবধি, সেই অভয় মন্ত্রটি অক্ষয় কবচরূপে তাঁহাকে চিরজীবন রক্ষা করিয়াছে। তাঁহার মা বলিয়াছিলেন, “ভয় হইলেই দয়ামাধবকে ডাকিও!” শোকে, তাপে, ভয়ে, এই মন্ত্রটিই তাঁহাকে সান্ত্বনা দান করিয়াছে। আকাল ধর্মশিক্ষা করিয়া খুব একটা হৈ-চৈ উঠিয়াছে, আসল কথা, মা শিশুর সুকুমার হৃদয়ে শৈশবে ধর্মের বীজ রোপণ করিলে যেরূপ সুফল হয়, পরে শত শত ধর্মগ্রন্থ পাঠেও তাহা হয় না। ইহার জীবনের আর একটি বিশেষত্ব লেখাপড়া শিখিবার জন্য কান্তিক আগ্রহ।

লেখাপড়া শিখিবার তাঁহার কোন সুবিধা ঘটে নাই। তখনকার কালে স্ত্রীলোকের লেখাপড়া শেখা দোষের মধ্যে গণ্য হইত। তিনি আপনার যত্নে, বহু কষ্টে লেখাপড়া শিখিয়াছেন। তাঁহার ধর্মপিপাসাই তাঁহাকে লেখাপড়া শিখিতে উত্তেজিত করে। নভেল নাটক পড়িতে পারিবেন বলিয়া নহে- পুঁথি পড়িতে পারিবেন বলিয়াই- চৈতন্য ভাগবত পড়িতে পারিবেন বলিয়াই লেখাপড়া শিখিবার জন্য তাহার এত আগ্রহ!

ইঁহার ধর্ম বাহ্যিক অনুষ্ঠান আড়ম্বরে পর্যবসিত নহে, ইহার ধর্ম জীবন্ত আধ্যাত্মিক ধর্ম। জীবনের প্রত্যেক ঘটনায় ইনি ঈশ্বরের হস্ত দেখিতে পান, তাঁহার করুণা উপলব্ধি করেন, তাঁহার উপর একান্ত নির্ভর করিয়া থাকেন; এককথায় তিনি ঈশ্বরেতেই তন্ময়। এরূপ উন্নত ধর্মজীবন সচরাচর দেখা যায় না। আমাদের দেশে ঈশ্বরের নামে যে বিগ্রহ স্থাপন করা হয়, তাহাকে ঠিক পৌত্তলিকতা বলা যায় না; তাহা ঈশ্বরের স্মারক চিহ্ন মাত্র। তাহাতে পৌত্তলিকতার সঙ্কীর্ণ ভাব নাই। খৃস্টানেরা হিন্দুকে যেভাবে পৌত্তলিক বলিয়া অবজ্ঞা করেন, হিন্দুর পৌত্তলিকতা সে ভাবের নহে। লেখিকার জননী লেখিকাকে ঈশ্বর সম্বন্ধে যে উপদেশ দিয়াছেন, তাহা হইতেই এই কথা প্রতিপন্ন হইবে।

আমি তখন মাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, মা দয়ামাধব দালানে থাকিয়া কেমন করিয়া আমাদের কান্না শুনিলেন? মা বলিলেন, তিনি পরমেশ্বর, তিনি সর্বস্থানেই আছেন, এজন্য শুনিতে পান, তিনি সকলের কথাই শুনেন। সেই পরমেশ্বর আমাদের সকলকে সৃষ্টি করিয়াছেন। তাঁহাকে যে যেখানে থাকিয়া ডাকে তিনি শুনেন। বড় করিয়া ডাকিলেও তিনি শুনেন, ছোট করিয়া ডাকিলেও তিনি শুনেন, মনে মনে ডাকিলেও তিনি শুনিয়া থাকেন; এজন্য তিনি মানুষ নহে, পরমেশ্বর। তখন আমি বলিলাম, মা! সকল লোক যে পরমেশ্বর পরমেশ্বর বলে, সেই পরমেশ্বর কি আমাদের? মা বলিলেন, এই এক পরমেশ্বর সকলের, সকল লোকই তাঁকে ডাকে, তিনিই আদিকর্তা। এই পৃথিবীতে যত বস্তু আছে, তিনি সকলই সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনি সকলকেই ভালবাসেন, তিনি সকলেরই পরমেশ্বর।”

ইহা অপেক্ষা উন্নতর ঈশ্বরের কল্পনা আর কি হইতে পারে? এই গ্রন্থখানি প্রত্যেক গৃহস্থের ঘরে রাখা আবশ্যক। এমন উপাদেয় গ্রন্থ অতি অল্পই আছে।

শ্রী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

বালিগঞ্জ

২০ জৈষ্ঠ


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ